oplus_0

বিএনসিসির প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম জোরদারকরণ: নতুন নির্দেশনা ও করণীয়

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) তরুণদের মধ্যে শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব এবং দেশের প্রতি সেবার মনোভাব গড়ে তোলার এক অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম। এই কার্যক্রমকে আরও সুসংগঠিত, গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি ট্রেনিং কনফারেন্সে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশনাসমূহ সকল স্তরের বিএনসিসি সদস্যদের, বিশেষ করে প্রফেসর আন্ডার অফিসার (PUO) এবং টিচার আন্ডার অফিসার (TUO)-দের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, এই নির্দেশনাগুলো সহজ ভাষায় বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

১. শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন
যেকোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রোটোকল বা আনুষ্ঠানিকতার নিয়ম মেনে চলা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:

  • ফুলের তোড়া উপস্থাপন বন্ধ: এখন থেকে কোনো পরিদর্শক অফিসারকে স্বাগত জানাতে ফুলের তোড়া ব্যবহার করা যাবে না। এই প্রথাটি শুধুমাত্র বিএনসিসির সর্বোচ্চ অভিভাবক, মহাপরিচালক (DG) মহোদয়ের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে সেক্ষেত্রেও রেজিমেন্ট কমান্ডারের কাছ থেকে (ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্টের মাধ্যমে) মৌখিক অনুমতি নিতে হবে। এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে পেশাদারিত্ব বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
  • সঠিক ইউনিফর্ম পরিধান: বিএনসিসির কার্যক্রমে নির্ধারিত ইউনিফর্ম সঠিকভাবে পরা বাধ্যতামূলক। এটি কেবল একটি পোশাক নয়, বরং শৃঙ্খলা, পরিচয় ও গর্বের প্রতীক। ইউনিফর্ম পরার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম দেখা গেলে তা প্রত্যাহার করা হবে। প্রয়োজনে সিনিয়রদের সাহায্য বা সরাসরি রেজিমেন্টে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা: বিএনসিসি একটি জাতীয় ও অরাজনৈতিক সংগঠন। কোনো ক্যাডেটকে রাজনৈতিক বা বিতর্কিত কোনো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের নিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলাই এর মূল উদ্দেশ্য।

২. প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনা
প্রতিটি প্লাটুন বা কোম্পানির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরঞ্জাম ও তার সঠিক হিসাব রাখা জরুরি।

  • সম্পূর্ণ স্টক তালিকা তৈরি: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের (PUO ও TUO-এর তত্ত্বাবধানে) স্টোরে থাকা সকল সরঞ্জামের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। এই তালিকায় রেজিমেন্ট থেকে প্রাপ্ত এবং বিএনসিসি ফান্ড থেকে কেনা উভয় প্রকার মালামাল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই কাজটি সামরিক সদস্যদের সহায়তায় সম্পন্ন করতে হবে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
  • প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়: প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী, যেমন— কাঠের রাইফেল, গার্ড অব অনার ও পাইলট ডিউটির সরঞ্জাম, এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণ উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছু কেনার প্রয়োজন হলে, তার আগে একটি প্রস্তাবনা ও সম্ভাব্য খরচের হিসাব জমা দিতে হবে। এতে পরিকল্পনা মাফিক ব্যয় নিশ্চিত করা সহজ হবে।

৩. কার্যকর যোগাযোগ ও তদারকি
ব্যাটালিয়ন ও প্লাটুন পর্যায়ে কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য নিয়মিত যোগাযোগ অপরিহার্য।

  • মাসিক যোগাযোগ স্থাপন: প্রত্যেক PUO/TUO-কে প্রতি মাসে অন্তত একবার ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্টের সাথে ভয়েস কল বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে। এই সময় বিগত মাসের কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ এবং আগামী মাসের পরিকল্পনা জানাতে হবে। কোনো বিশেষ কার্যক্রম না থাকলেও সৌজন্যমূলক কল (Courtesy Call) করার কথা বলা হয়েছে, যা आपसी সম্পর্ক দৃঢ় করবে।
  • কার্যক্রম তদারকি: BNCCO-গণ নিজ নিজ কোম্পানি বা ব্যাটালিয়নের PUO/TUO-দের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন। এর মাধ্যমে প্লাটুনের ক্যাডেটদের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে এবং নির্দেশনাসমূহ সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা যাবে।

৪. ক্যাডেটদের সাথে সংযোগ ও উন্নয়ন
ক্যাডেটরাই বিএনসিসির প্রাণ। তাদের উন্নয়ন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

  • মাসিক মতবিনিময় সভা: প্রতিটি প্লাটুনকে মাসে অন্তত একবার ক্যাডেটদের সাথে একটি কেন্দ্রীয় মতবিনিময় সভা আয়োজন করতে হবে। এতে ক্যাডেটরা তাদের মতামত ও সমস্যার কথা জানাতে পারবে। প্রয়োজনে এই সভায় প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেও আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে, যা ক্যাডেটদের উৎসাহিত করবে।
  • ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ: ক্যাডেটদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে ও ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। নতুন প্রশিক্ষণ বর্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, মাসিক ফায়ারিংসহ নানা আকর্ষণীয় কার্যক্রম যুক্ত হচ্ছে। যারা অনিয়মিত থাকবে, তারা এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
  • ক্যাডেট ব্যবহারের নিয়মাবলী: প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানে (যেমন: ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্টকে জানিয়ে ক্যাডেটদের দায়িত্বে নিয়োজিত করা যাবে এবং অনুষ্ঠানের ছবি পাঠাতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনো প্রোগ্রামে ক্যাডেটদের ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে ফোনে অনুমতি নিয়ে পরে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। এই দায়িত্বটি জ্যেষ্ঠ PUO/TUO পালন করবেন।

উপসংহার: কমান্ড থেকে প্রেরিত এই নির্দেশনাসমূহ বিএনসিসির কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল ও ফলপ্রসূ করার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি প্লাটুনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে। সকল PUO, TUO এবং ক্যাডেটদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হলে বিএনসিসি তার লক্ষ্য অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

About মুহম্মদ জিয়াউর রহমান

Check Also

লেকচার শিট: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স – উদ্দেশ্য, নীতি, পরিকল্পনা ও কার্যক্রম

প্রশিক্ষণের সময়: ৪৫ মিনিট শ্রোতা: বিএনসিসি ক্যাডেট লেকচারের কাঠামো ভূমিকা (৫ মিনিট) উদ্দেশ্য (১০ মিনিট) …

Leave a Reply

Optimized by Optimole