ফাঁদ

ভূমিকাঃ

ফাঁদ একটি ক্ষুদ্র অভিযান যাতে স্বল্প সংখ্যক সৈনিক শত্রর উপর আকস্মিক আঘাত হেনে তাকে ধ্বংস করে পশ্চাৎ অপসারণ করে। একটি সফল ফাঁদ শত্রুর অপূরণীয় ক্ষতিসাধন ও শত্রুর অপুরণীয় মনোবল ক্ষুন্ন করে, অপরপক্ষে নিজেদেরও মনোবল অনেকাংশে উঁচু করে। আকস্মিকতা ফাঁদের মূলমন্ত্র । এই অভিযান নিয়মিত ও গেরিলা বাহিনী উভয়েই সমাধা করে । যুদ্ধের ইতিহাসে সফল ফাঁদের অনেক উদাহরণ বিদ্যমান ।

সংজ্ঞাঃ

গোপনীয়তার সাথে অবস্থান নিয়ে চলন্ত অথবা ক্ষণিকে জন্য শত্রুর পদদল বা শত্রুর কোন যানবাহনকে ধ্বংস বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করে দ্রুত প্রত্যাহার করাকে ফাঁদ বা এ্যাম্বুস বলে ।

ফাঁদের উদ্দেশ্যঃ 

ক। উপর্যুপরি ফাঁদের দ্বারা শত্রুর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পঙ্গু বা বিপদ সংকুলান করে তোলা ।

খ। নিরাপত্তা ও রক্ষণ কাজে অধিক সৈনিক মোতায়েনে শত্রুকে বাধ্য করা । 

গ। টহল দলের উপর ফাঁদ পেতে শত্রুর টহলকে বিপদজনক করে তোলা ।

স্থান নির্বাচনের সময় বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় সমূহঃ (প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ)

ক। লক্ষ্যবস্তুর আকার ও প্রকার যার উপর নির্ভর করবে স্থানের বিস্তৃতি ।

খ। লক্ষ্যবস্তুর চলাচলের পদ্ধতি যেমন পায়ে চলা বা যানবাহনে ।

গ। লক্ষ্যবস্তুর চলাচলের সময় (দিন/রাত)।

ঘ। শত্রুর প্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থান।

ঙ। শত্রুর প্রহরীর সাধারণ অভ্যাস

চ। শত্রুর সম্ভাব্য সাহায্যকারী সৈন্যদলের অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।

ছ। শত্রুর অভ্যন্তরীণ, মূল/পার্শ্ববর্তী পার্টির সহিত যোগাযোগের মাধ্যম ।

জ। রণ কৌশলগত বিবেচনা ।

(১) ভূমি এমন হওয়া উচিত যাতে মূল অবস্থান বা পর্যবেক্ষণের স্থান হতে দেখা যায়। এই ভূমি শত্রুর দৃষ্টি হতে আড়ও যেন দেয

(২) ভাল ফিল্ড অব ফায়ার ও একযোগে অধিক হাতিয়ার ব্যবহার সম্ভব । 

(৩) প্রত্যাহারের সুবিধাজনক পথ । 

(৪) শত্রুর পালাবার রাস্তা দূর্গম ও কষ্টসাধ্য এমন স্থান, যেখান থেকে আড় নিয়ে শত্রুর পক্ষে ফিরতি ফায়ারের জন্য পুনঃসংগঠিত হওয়া বা ফাঁদের অবস্থানে হামলা করা দূরহ বা অসম্ভব । 

(৫) অবস্থান এমন হতে হবে যেখানে লক্ষ্যবস্তুকে শত্রুর বাকি অংশ হতে বিচ্ছিন্ন করা যায়। যেমন-রাস্তার বাঁক, ডিফাইল বা কোন প্রতিবন্ধকতার এপার ওপার।

(৬) বধ্যভূমি এমন হওয়া উচিত যেন শত্রু সংকীর্ণ সম্মুখভাগ বজায় রেখে চলতে বাধ্য হয় এবং যেখানে নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য একে অপরের কাছাকাছি চলতে হয়।

প্রকার ভেদঃ

ফাঁদ দুই প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ

ক। তড়িৎ ফাঁদ

খ। পরিকল্পিত ফাঁদ

তড়িৎ ফাঁদঃ

টহল দেওয়ার সময় হঠাৎ সামনে পড়া কোন শত্রুদলকে বা ঘাঁটিতে অবস্থানের সময় কোন নির্দিষ্ট খবরের উপর ভিত্তি করে তড়িৎ অবস্থান নিয়ে যে ফাঁদ পাতা হয় তাকে তড়িৎ ফাঁদ বলে । এই ধরনের ফাদের সফলতা নির্ভর করে প্রত্যেক সৈনিকের চতুরতা এবং আদেশে কার্য সমাধা করার মত দক্ষতার উপর। সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সৈনিকের দ্বারাই এই ধরণের ফাঁদ সম্ভব ।

পরিকল্পিত ফাঁদঃ 

শত্রু ও লক্ষ্যবস্তু সম্বন্ধে পর্যাপ্ত সংবাদ, বিস্তারিত পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পর এই প্রকারের ফাঁদ সমাধা করা হয়। সাধারণতঃ নির্বাচিত অধিনায়ক ও সৈন্য দ্বারা গঠিত একটি জংগী টহল এই

ধরণের ফাঁদ সম্পাদন করে।

লক্ষ্যবস্তুর নির্বাচনঃ

ফাঁদ অভিযানের জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্বাচনে নিম্নের বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দিতে হবেঃ 

ক। লক্ষ্যবস্তু এমন হতে হবে যেন শত্রুর সর্বাধিক ক্ষতি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর আকার ও প্রকার শত্রুর নিকট এর মূল্য প্রাধান্য পাবে ।

খ। যে ক্ষেত্রে স্বল্প সংখ্যক সৈনিক দিয়ে শত্রুর বেশি ধ্বংস সাধন করা যায়।

গ। সুনিশ্চিত সফলতা ও সুষ্ঠু প্রত্যাহার যে ক্ষেত্রে সম্ভব।

ঘ। শত্রুর পক্ষে অনাকাঙ্খিত স্থানে লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করা ।

লক্ষ্যবস্তু সমূহঃ

ফাঁদের লক্ষ্যবস্তু নিম্নরূপ হতে পারেঃ

ক। পায়ে হেঁটে অথবা যানবাহন দ্বারা রসদ, জ্বালানী, গোলাবারূদ ও অস্ত্র সস্ত্র সরবরাহকারী দল/ কনভয়।

খ। বিচ্ছিন্ন কোন চৌকিতে খাদ্য সরবরাহকারী দল। 

গ। কোন অবস্থান হতে বদলী হয়ে আসা বা বদলী করতে যাওয়া ছোট দল।

ঘ। পানি সংগ্রহের স্থানে যাতায়াতকারী শত্রু ও ছোট দল ।

ঙ। শত্রুর সিগ্‌নাল লাইন পার্টি ।

চ। ইঞ্জিনিয়ারের রাস্তা মেরামতকারী দল, যারা নিয়মিত কাজ করে থাকে।

ছ । সব সময় একই রাস্তায় চলাচলরত ক্ষুদ্র দল ।

জ।  শত্রুর পর্যবেক্ষণ চৌকিতে যাতায়াতকারী দল। 

ঝ। শত্রুর বিছিন্ন কোন ট্যাংক বা গাড়ি ।

ঞ। শত্রুর এমন একটি দল যারা আমাদের অবস্থানের উপর গুলিবর্ষণ করে বিশৃংখলার চেষ্টায় লিপ্ত।

ট। নিয়মিত টহল দল। 

ফাঁদ পরিকল্পনাঃ

পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয় বিবেচনা করা উচিতঃ

ক। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র স্থাপনে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। শরুর সম্ভাব্য পালানোর পথসমূহ ফাদার, মাইন, বুবিট্রাপ, কাঁটা তার প্রতিবন্ধক, পাঞ্জি বা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকের মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে হবে।

খ। সংরক্ষিত দল অবশ্যই নিযুক্ত করবে এবং এদের নিজ উদ্যমে কাজ করার সামর্থ থাকতে হবে।

গ। ফাঁদের দুই মাথায় লুক অডিট বা পূর্ব সংকেত প্রদানকারী অবশ্যই নিয়োগ করতে হবে এবং এদের মূল দলের নিঃশব্দ সংকেত দানের ব্যবস্থা করে রাখা আবশ্যক যাতে শত্রুর আগমন বার্তা দিতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে কাট আপ পার্টি এই কাজ করতে পারে । 

ঘ। ফাঁদ সামাধানে একদিনের বেশি সময় লাগলে প্রশাসনিক এলাকা স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে যা ফাঁস এলাকার নিকটবর্তী নিরাপদ স্থান যেখানে সহজ প্রতিরক্ষা সম্ভব।

আদেশঃ

আদেশ দুই ভাগে দেয়া হয়। যতটুকু সম্ভব নিজ অবস্থান ত্যাগের পূর্বেই মডেলের সাহাযো এবং পরবর্তীতে প্রত্যেকের অবস্থান সম্বন্ধে বিস্তারিত দেখানো হয় ফাঁদের স্থানে গিয়ে। 

ফাঁদের আদেশে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থাকবেঃ

ক। যাওয়া বা আসার রাস্তায় নিজস্ব কোন অবস্থান বা টহল আছে কিনা তার সংবাদ। 

খ। লক্ষ্যবস্তুর প্রকার, শক্তি এবং অভ্যাস সম্বন্ধে সংবাদ। শত্রুর অন্যান্য অতিরিক্ত সৈন্য দলের অবস্থান।

গ। ফাঁদের লক্ষ্যকে উদ্দেশ্যে আকারে দেয়া। 

ঘ। ফাঁদের অবস্থান ও তাকে ঘিরে রাখা ভূমি হতে রণকৌশলগত বিষয়াবলী ।

ঙ। ফাঁদের স্থানে যাওয়া আসার পথ । 

চ। ফাঁদের স্থান পর্যন্ত সকল ধাপ ও প্রত্যেক ধাপের জন্য মিলনস্থান।

ছ। ফাঁদের পার্টিকে বিভিন্ন উপদলে ভাগ ও প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজ বন্টন।

জ। সকলের কাজ অনুযায়ী অস্ত্র বন্টন করা।

ঝ। ফাঁদ বাতিল করার জন্য নিশ্চুপ বাতিল সংকেত ও প্রত্যেকের করণীয়।

ঞ। গুলিবর্ষণ আরম্ভ করার সংকেত কে দিবে। এটা সাধারণতঃ অধিনায়ক ভেরী লাইট পিস্তল বা নিজের গুলি বর্ষণের দ্বারা আরম্ভ করে থাকে। 

ট। কোন সংকেত-এ কোন কাজ করতে হবে, যেমন গুলিবর্ষণ, বেয়নেট ব্যবহার ইত্যাদি।

ঠ। যুদ্ধবন্দী, সরঞ্জাম বা শত্রুর মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য সুনির্দিষ্ট কাজ বন্টন । 

ড। ফাঁদের সম্ভাব্য স্থায়ীত্বকাল ।

ঢ। কার্য সামাধার পরে প্রত্যাহার সংকেত ও আবরণী দলের গুলিবর্ষণের স্থায়ীত্বকাল ।

ণ। ফাঁদ স্থানে যাওয়া অথবা ফেরত আসার সময় শত্রুর সাক্ষাতে করণীয়।

ত। প্রত্যাহারকে আড়াল করার জন্য গোলন্দাজ, মর্টার বা কোন টহলের সাহায্য (যদি থাকে)।

থ। নিজস্ব হতাহতদের পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা। 

দ। মূল অবস্থান হতে ফাঁদের দল ও ফাঁদ উপদলসমূহের মধ্যে যোগাযোগ।

ফাঁদের পর্বঃ

ফাঁদ সাধারণতঃ ৪ পর্বে সামাধা করা হয়ঃ 

ক। প্রস্তুতি পর্বঃ উপরস্থ অধিনায়ক হতে হুঁশিয়ারী আদেশ পাওয়ার পর অভিযানে বেরিয়ে যাবার আগে পর্যন্ত সকল কার্যক্রমকে প্রস্তুতি পর্ব বলে।

খ।গমন পর্বঃ নিজ অবস্থান থেকে চূড়ান্ত মিলন স্থানে গমন (টহল অনুরুপ)। 

গ। কার্যসম্পাদন পর্বঃ চূড়ান্ত মিলন স্থান হতে কার্য সমাধা এবং কার্যশেষে পুনরায় মিলন স্থানে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত এই পর্ব বহাল থাকে।

ঘ।পশ্চাৎপসারণ পর্বঃ মিলন স্থান হতে নিজ অবস্থান ফিরে আসা।

ফাঁদের স্থান নির্বাচনঃ 

প্রাথমিক ম্যাপ, টহল কর্তৃক আনীত সংবাদ বা এয়ার ফটোর উপর ভিত্তি করে ফাঁদের স্থান নির্বাচন করা হয়। সাময়িকভাবে নির্বাচিত স্থান/স্থানসমূহে যেয়ে যদি ফাঁদের অধিনায়কগণ এবং উপদল অধিনায়কগণ গোপনীয়তা বজায় রেখে ঐ স্থানের উপযুক্ততা যাচাই করতে পারেন তবেই সর্বোত্তম। অতঃপর ফাঁদ অধিনায়ক উপদল অধিনায়কদের নিয়ে শত্রুর গতিবিধি, পার্শ্ববর্তী শত্রুর অবস্থান, আগমন ও নির্গমনের রাস্তা দেখে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণায়ন করবেন। এর ফলে উপদল অধিনায়ক অতি সহজে নিজ উপদলকে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান গ্রহণ করাতে পারেন। যদি ফাঁদ অবস্থানের রেকি সম্ভব না হয়, তবে ম্যাপ এয়ার ফটো টহল দ্বারা আনীত সংবাদ এবং উপরস্থ সদর দপ্তর হইতে সংগৃহীত সংবাদ থেকে নির্বাচন করতে হবে। তবে এই রকম পরিস্থিতিতে ফাঁদ বিভিন্ন উপদল অবস্থান গ্রহণের আগে ফাঁদ অধিনায়কগন নিজ নিজ অবস্থান রেকি করা অত্যাবশ্যক ।

গমন পর্বঃ

এই পর্ব সাধারণতঃ টহলের কৌশল অনুসারে সম্পন্ন করা হয়। এই পর্বে চূড়ান্ত পরিদর্শনের পর ফাঁদ দল নিজ অবস্থান হতে চূড়ান্ত মিলনস্থানে গমন করে। চূড়ান্ত মিলনস্থান দখল পর্যন্ত এই পর্ব স্থায়ী হয়।

স্থান দখল করাঃ

অবস্থান দখল করা সময় নিম্নলিখিত বিষয়াদি মনে রাখতে হবেঃ

ক। শত্রুর দৃষ্টি এড়ানোর জন্য ফাঁদের স্থান রাত্রে দখল করা উচিৎ। যদি দিনের বেলায় স্থান দখল করতে হয় তাহলে ছোট ছোট দলে আচ্ছাদিত কোন পথে আসা উচিৎ ।

খ। মিলনস্থান হতে প্রত্যেকটি দল যার যার নিজস্ব রাস্তায় স্ব স্ব অবস্থানের দিকে যাত্রা করবে এবং আবরণী দল সবার আগে যাত্রা করে স্থান দখল করবে।

গ। ছন্দকরণের জন্য আশেপাশের ঝোপ ঝাড় বা প্রাকৃতিক পরিবেশ যত দূর সম্ভব কম নষ্ট করা উচিৎ। খনন করলে অবশ্যই পূর্ণ ছদ্মকরণ করতে হবে।

ঘ। শত্রুর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে এমন কোন কাজ বা শব্দ না করা।

ঙ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল দল অবস্থান গ্রহণের পর প্রতিটি দল নির্ধারিত সংকেতের সাহায্যে অধিনায়ককে পৌঁছানোর সংকেত দিবে। 

চ। ফাঁদের স্থান দখলের পর প্রহরী নিযুক্ত করা উচিত।

ফাঁদের কার্য সামাধা করাঃ

ক। লুক আউট ম্যান পূর্বাভাষ দেয়ার জন্য শত্রুর আগমন পথে একটু দুরত্বে নিয়োগ করা হবে। লুক আউট ম্যান বিচ্ছিন্নকারী দল হতে নিয়োগ করা হয় এবং শত্রুর আগমন সংবাদ প্রদান করে তারা নিজস্ব

দলের সহিত প্রয়োজনবোধে বা পরিস্থিতি সাপেক্ষ মিলিত হবে।

খ। অধিনায়ক নিজে গুলিবর্ষণের সংকেত দিবেন। এপরিস্থিতিতে ফাঁদ এলাকায় আলোর প্রয়োজন হয়। এজন্য টিপ ফ্লেয়ার বা আলো প্রদানকারী মর্টারের গোলা চালাতে পারেন। দিনের বেলা ফাঁদের  টার্গেটকে অন্যান্য সহযোগী শত্রুদের কাছ থেকে পৃথক করার জন্য ধূম্রজালের দরকার হতে পারে। অধিনায়ক নিজ সংকেতের মাধ্যমে ফাঁদ পার্টির গুলিবর্ষণ বন্ধ করবেন। এজন্য বাঁশি বা তৈরী লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শত্রুর একটি গুলি করার ক্ষমতা থাকা পর্যন্ত শত্রুর উপর ফায়ার বজায় রাখতে হবে ।

গ। কোন সৈনিক সংকেতের পূর্বে ফায়ার করলে সম্পূর্ণ ফাঁদেই ব্যর্থতায় পর্যবর্ষিত হবে, তাই কড়াকড়ি ফায়ার শৃংখলা বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। 

এ বিষয়ে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহে গুরুত্ব আরোপ করা উচিৎঃ

১) আদেশ সকলেই সঠিকভাবে বুঝা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।

২) যদি লক্ষ্যবস্তু সময়মত না আসে তবে ধৈর্য্যশীল হওয়া। 

৩) সংকেতের জন্য সর্বদাই সতর্ক থাকা।

৪) সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে সাহসিকতার সাথে নিজ নিজ কাজ করা।

৫)  আদেশকৃত অস্ত্ৰ সময়মত ব্যবহার করা।

৬) ফাঁদ দল যেন হাতাহাতি সংঘর্ষে লিপ্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

৭) সকলেই প্রত্যাহার সংকেতের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাহার করা।

পশ্চাৎপসারণঃ

ফাঁদ কার্য সামাধা শেষে অধিনায়কের পূর্ব নির্ধারিত সংকেতে প্রত্যেকটি দল নিজস্ব রাস্তায় দ্রুত মিলনস্থানে মিলিত হয়। ফাঁদ স্থান হতে মিলনস্থান পর্যন্ত সাধারণতঃ উপদলে কার্যসামাধা করা হয়। এই পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক হয়। যেহেতু আবরণী দল ব্যতীত সকল পার্টি একই সময় প্রত্যাহার করছে, তাই অতি অল্প সময়ে একই সাথে স্থান ত্যাগ সম্ভব। গোলান্দাজ/মর্টারের সাহায্যের প্রয়োজন যদি থাকে তাহলে প্রত্যাহারকে আড়াল করার জন্য অবিলম্বে তা চাওয়া যেতে পারে। আবরণী দল আবরণী ফায়ার প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ে মিলনস্থানে মূল দলের সাথে মিলিত হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সৈনিকগনের আলাদা মিলনস্থান দেন উচিৎ। মিলনস্থানে আসার পর প্রত্যেক পার্টিকে গণনা করা ও হতাহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। মিলনস্থানে থাকার যত কম সময় হয় ততই ভাল, এজন্য স্থায়ীকাল পূর্বে নির্ধারিত থাকে ।

মিলনস্থান হতে নিজ অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করাঃ

এই পর্ব জংগী টহলের, ফেরত আসার মতই। তবে ফাঁদ দলকে অতি দ্রুততার ফেরত আসা উচিৎ।

ফাঁদের কৌশলঃ

ফাঁদের রণ ড্রিলঃ

ফাঁদের কার্য সামাধা করার জন্য একটি ফাঁদ দলকে নিম্নরূপভাবে ভাগ করা যেতে

পারে : 

ক। বিচ্ছিন্নকারী দল (কার্ট অব পার্টি)

খ। আবরণী দল (কভারিং পার্টি)। 

গ। প্রধান দল (মেইন পার্টি)।

ঘ। সংরক্ষিত দল (রিজার্ভ পার্টি)।

লক্ষ্যবস্তুর আকার ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পার্টির সংগঠনঃ

বিচ্ছিন্নকারী দলঃ

লক্ষ্যবস্তু ফাঁদ স্থানে ঢোকার পর এই পার্টি দুই মাথা হতে গুলি বর্ষণ করে লক্ষ্যবস্তুর পালাবার পথ রোধ করে ও শত্রুর সাহায্যোর্থে কোন সৈনিক দল আসলে তাকে বাধা প্রদান করে। সাধারণতঃ

লক্ষ্যবস্তু একটি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছার পর বিচ্ছিন্নকারী দল গুলিবর্ষণ আরম্ভ করে। শত্রুর আগমন পথে বিস্ফোরক রাখলে তার বিস্ফোরণও সংকেত হিসাবে কাজ করতে পারে। এই দল লুক আউটের কাজ করতে পারে ।

আবরণী দলঃ

এই দলের প্রধান কাজ ফাঁদ দলের প্রত্যাহারকে আবরণ দেয়া। ক্ষেত্র বিশেষে শত্রুর অগ্রবর্তী অংশকে থামানো এবং ধ্বংস করার দায়িত্বও আবরণী দলকে দেয়া যেতে পারে। অধিকন্ত লোকবলের অভাবে এই দল সংরক্ষিত দল হিসাবে কাজ করতে পারে। ফাঁদ দলের উপ-অধিনায়ক এই দলকে নেতৃত্ব দেয় । তবে ভূমি ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে সংরক্ষিত দল বা অন্য যে কোন দলে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। যাতে সে দ্রুত এবং সহজে অধিনায়কের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে।

প্ৰধান দলঃ 

এই দলকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দেয়া হয়ে থাকে এবং সরাসরি ফাঁদ দলের অধিনায়কের অধীনে থাকে। লক্ষ্যবস্তুর প্রকার অনুসারে প্রধান দল বিভিন্ন উপদলে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন- ধ্বংসকারী ও তল্লাশী দল। এই দলের কাজ নিম্নরুপঃ

ক। লক্ষ্যবস্তুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। 

খ। শত্রুর আহত ও নিহতদের তল্লাশী করা।

গ। কোন বিশেষ উদ্দেশ্য থাকলে তা কর্যকরী করা ।

সংরক্ষিত দলঃ

এই দল প্রধান দলের কাছাকাছি বা কোন উচ্চ স্থানে অবস্থান নেয় এবং যে কোন দলকে নিজ উদ্যোগে সাহায্যের জন্য তৈরি থাকে। ফাঁদ উপ-অধিনায়ক সংরক্ষিত দলের নেতৃত্বও দেয়া যেতে পারে।

যানবাহনের উপর ফাঁদঃ

যানবাহন কনভয়ের উপর ফাঁদ এর কৌশল নিম্নরূপ অবলম্বন করতে হবেঃ 

ক। এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে চালককে গতি কমাতে হয়।

খ।গাড়ি থামানোর জন্য রাস্তার উপর ও পার্শ্বদেশে প্রতিবন্ধক তৈরি করা যা চালক দেখতে না পারে।

গ। রাস্তার উভয় পার্শ্বে মাইন বসানো। 

ঘ। বেশি গাড়ির কনভয় হলে কোন এক অংশকে ফাঁদ করা ।

যানবাহনে চলাকালে ফাঁদ হতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাঃ

ক। ফাঁদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা হলো যে ফাঁদেও লক্ষ্যবস্তু না হওয়া। সর্বদা সতর্ক থাকা, বিস্তৃতিভাবে চলে এবং সময় সময় চলার প্রণালী পরিবর্তন করা। যদি সকল ব্যবস্থাপনার পরও কনভয় ফাঁদ করা হয় তাহলে এর প্রতিক্রিয়া হবে দ্রুত এবং আক্রমণাক্তক। যানবাহন থেকে সকলেই দ্রুত নেমে গিয়ে আড়ালে যাবে এবং শত্রুর উপর পাল্টা গুলিবর্ষণ করবে। কোন ক্ষেত্রই গাড়ীর নীচে যেন অবস্থান নেয়া হয় কারণ সে গুলো হচ্ছে মরণ ফাঁদ ।

খ। যখন সম্ভব্য ফাঁদ এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তখন ফাঁদ হওয়া মাত্র কি করতে হবে তা সকলের জানা উচিত। সে জন্য বহনকারী যানবাহনের আচ্ছাদন এবং টেইল বোর্ড নামিয়ে রাখা উচিত। গাড়ীতে

যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সবাইকে সতর্ক করে রাখবেন। 

গ। সাঁজোয়া গাড়ি বিশেষ কনভয়ের অগ্রভাগে চলতে পারে। যদি যথেষ্ট সাজোয়া গাড়ি থাকে তাহলে সেগুলিকে সম্পূর্ণ কনভয়ের মধ্যে ছড়িয়ে রাখা উচিত।

ঘ। ফাঁদের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্রই সকল গাড়ি থেমে যাবে, কিন্তু রাস্তার পার্শ্বে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। কারণ, সেখানে মাইন পাততে পারে। সকল সৈনিক দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে অবস্থান নিবে এবং পূর্বের প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী শত্রুর উপর গুলিবর্ষণ আরম্ভ করবে।

ফাঁদ কার্যকরী করার জন্য কয়েকটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয়ঃ

ক। শত্রুর আত্নগোপন অথবা ট্যাংক হাল ডাউন অবস্থায় যাওয়ার অবস্থান গুলিতে বুবিট্রাপ অথবা মাইন লাগানো । কোন কোন ক্ষেত্রে এই প্রকার জায়গায় নিজস্ব ধ্বংসকারী দল নিতে পারে।

খ। দিনের ফাঁদে নির্ভরশীল স্নাইপার নিয়োগ করা যেতে পারে, যাদের একমাত্র কাজ হবে শত্রুর অধিনায়কদের অথবা অন্য কোন ব্যক্তি যে শত্রুদের পুনঃ সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তাদের হত্যা করা ।

গ। গ্রেনেড এবং হালকা মর্টার ব্যবহার করা। কারন শত্রুর মধ্যে যত বেশি বিশৃংখলা দেখা দিবে তত বেশি হতাহত হবে।

ঘ। কোন ক্রমেই যেন ফাঁদ দল ফাঁদ স্থানে কোন সনাক্তকারী চিহ্ন না রেখে আসে এবং শত্রুর কোন সৈনিক যেন ফাঁদ স্থানে জীবিত অবস্থায় না থাকে। বিচ্ছিন্নকারী দলের কাজ হবে পলায়নরত শত্রুকে গুলি করে হত্যা করা । 

ঙ। সাধারণতঃ লক্ষ্যবস্তুর অগ্রবর্তী ভাগকে চলে যেতে দেয়া এবং প্রধান দলের উপর আঘাত হানা কিন্ত মনে রাখতে হবে যে-

(১) অগ্রবর্তী ভাগে যদি মটর সাইকেল থাকে, সেই মটর সাইকেল চালক পলায়ন করে সাহায্য নিয়ে আসতে পারে । ইস্পাতের তার রাস্তার দুপাড়ে টেনে রাখলে মটর সাইকেল আরোহীকে বাঁধা দেয়া সহজ হয়। 

(২) লক্ষবস্তুর অগ্রবর্তী ভাগে অথবা শেষে যদি ট্যাংক থাকে তাহলে উহার উপর আঘাত না হানলে ফাঁদ দলের উপর পাল্টা আক্রমণ করতে পারে।

চ। ফাঁদ স্থানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ধোঁয়া ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু বাতাস প্রবাহের দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে,না হলে ধোঁয়ার ফলে ফাঁদ দলের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

ছ। ট্যাংক এবং যানবাহনে ফাঁদ করার সময় ক্রু/ড্রাইভারকে গুলি করে হত্যা করার জন্য লোক নিয়োগ করতে হবে।

জ। ফাঁদ দল গন্ধযুক্ত কোন বস্তু সংগে যেন না রাখে । প্রত্যাহারের সময় ফাঁদ পার্টি নতুন কোন পথ যেন সৃষ্টি না করে।

ঝ। পরিবর্তিত রোড সাইন কোন কোন সময় লক্ষ্যবস্তুকে ফাঁদের স্থানে নিয়ে আসে।

ঞ। ফাঁদের বিভিন্ন দল সাধারণতঃ ফাঁদ স্থানের একই পার্শ্বে রাখা উচিত । 

ট। ফাঁদের জন্য সঠিক লোক নির্বাচন করতে হবে।

ঠ । ফাঁদ কার্যকরিতার সময় যদি পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকে এবং সফর করার সম্ভাবনা কম থাকে তবে বাতিল বা ওয়াশ আউট সংকেত প্রত্যেক দলকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্রুত মিলন স্থানের দিকে পশ্চাৎপসারন করতে হবে । এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ফায়ার ও চলন পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে।

ফাঁদের লক্ষ্যবস্তু সমূহ: 

ফাঁদের লক্ষ্যবস্তু নিম্নরূপ হতে পারে:

ক। পায়ে হেঁটে অথবা বি যানবাহন দ্বারা রসদ, জ্বালানী, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহকারী দল/ কনভয়।

খ। বিচ্ছিন্ন কোন চৌকিতে খাদ্য সরবরাহকারী দল ।

গ। কোন অবস্হান হতে বদলী হয়ে আসা বা বদলী করতে যাওয়া ছোট দল।

ঘ। পানি সংগ্রহের স্হানে তায়াতকারী শত্রুর ছোট দল । 

ঙ। শত্রুর সিগন্যাল লাইন পার্টি ।

চ। ইঞ্জিনিয়ারের রাস্তা মেরামতকারী দল যারা নিয়মিত কাজ করে। 

ছ। সব সময় একই রাস্তায় চলাচলরত ক্ষুদ্র দল ।

জ। শত্রুর পর্যবেক্ষণ চৌকিতে যাতায়াতকারী দল।

ঝ। শত্রুর বিচ্ছিন্ন কোন ট্যাংক অথবা স্বচালিত যান যা নিজস্ব অবস্হানের উপর বিচ্ছিন্নভাবে গোলাবর্ষণ করছে । 

ঞ। শত্রুর এমন একটি দল যারা নিজস্ব অবস্হানের উপর গুলিবর্ষণ করে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত ।

ফাঁদের রণ ড্রিল:

ফাঁদের কার্য সমাধা করার জন্য একটি ফাঁদ। দলকে নিম্নরূপে ভাগ করা যেতে পারে:

ক। বিচ্ছিন্নকারী দল।

খ। আবরণী দল।

গ। প্রধান দল।

ঘ। সংরক্ষিত দল।

লক্ষ্যবস্তুর আকার ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দলের আকার নির্ভর করে ।

চিত্রঃ ফাঁদ এলাকায় বিভিন্ন উপদলের সম্ভাব্য অবস্থান

রাতের ও দিনের ফাঁদের মধ্যে পার্থক্য:

ক। দিনের বেলা।

(১) সকলকে ছড়ানো থাকতে হবে এবং ভূমি, বিমান ও শত্রুর দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে হবে। 

(২) লক্ষ্যবস্তু যেহেতু ভাল দেখা যায় তাই দীর্ঘ দূরত্বে গুলি আরম্ভ করা যেতে পারে।

(৩) সম্পূর্ণ নৈপুণ্য এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। 

(৪) সকল পার্টি যথেষ্ট নিরাপত্তার সাথে একই সময় কাজ করতে পারে। 

(৫) গোলন্দাজ এবং অন্যান্য অস্ত্রের সাহায্যকারী গুলিবর্ষণ দেখে লক্ষ্যবস্তুর উপর আনা যেতে পারে।

খ। রাত্রি বেলা।

(১) ফাঁদ অবস্থানের কাছাকাছি থাকতে হবে এবং অতি অল্প দূরত্বে গুলি ছুঁড়তে হবে।

(২) গুলিবর্ষণ নির্ধারিত সময়ের জন্য করা উচিৎ যারপর বেয়নেট এবং ছুরির সাহায্যে কার্য সমাধা করতে হবে।

(৩) কোন প্রকার শব্দ করা এবং আলো জ্বালানো চলবে না। 

(৪) রাতের বেলা প্রত্যেকই অল্প ছদ্ম করণেই খোলা জায়গায় অবস্থান নিতে পারে কিন্তু যদি ফাঁদের অবস্থান রাস্তার নিকটে হয় এবং রাস্তায় চলমান যানবাহন আলো ব্যবহার করে তা হলে এটি সম্ভব হবে না।

(৫) গ্রেনেড এবং হালকা ধরণের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রাইফেল হতে অধিক কার্যকরী হয়।

(৬) দিনের তুলনায় মিলন স্থান নিকটে হতে হবে। 

(৭) বিভিন্ন দলের গুলিবর্ষণের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে ও শক্ত ফায়ার শৃংখলা মানতে হবে।

সেকশন কমান্ডার হিসাবে করণীয়

একজন সেকশন কমান্ডারকে ফাঁদ অভিযানে ক্ষেত্র বিশেষে অধিনায়ক হতে শুরু করে যে কোন উপদল অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাকে নিম্নলিখিত বিষয় অবশ্য মনে রাখতে হবেঃ

ক। লক্ষ্যবস্তুর প্রকার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি নির্বাচন এবং তার কার্যকরী ব্যবহারের ধারণা ।

খ। রণকৌশলগত বিবেচনা; যেমন ফাঁদের স্থান নির্বাচন, ফিল্ড অব ফায়ার, প্রত্যাহারের সুবিধাজনক পথ ইত্যাদি । 

গ। লুক আউট ম্যান বা পূর্ব সংকেত প্রদানকারী হিসাবে উপযুক্ত এবং নিজ উদ্যমে কাজ করতে সামর্থ সৈনিকদের নির্বাচন ।

ঘ। ফায়ার ডিসিপ্লিন মেনে চলা ।

ঙ। শত্রুকে বাঁধা প্রদান বা থামানোর উপযুক্ত উপকরণ নির্বাচন ।

উপদল অধিনায়ক হিসাবে করণীয়:

উপদল অধিনায়ক হিসাবে প্রচলিত অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিম্নোক্ত বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরী :

ক। বিচ্ছিন্নকারী দল: 

এ দলের প্রধান কাজ হলো লক্ষ্যবস্তু ফাঁদ এলাকায় প্রবেশের পর উপর পার্শ্ব হতে লক্ষ্যবস্তুর পালানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া এবং শত্রুর সাহায্যার্থে কোন সৈন্যদল আসলে তাদের বাঁধা প্রদান করা। অধিনায়ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো লক্ষ্যবস্তু প্রকার অনুযায়ী উপযুক্ত বাঁধা বা পথরোধের উপকরণ নির্বাচন।

খ। আবরণী দল:

এই পথের মূল কাজ হলো ফাঁদ দলের নিরাপদ প্রত্যাহারকে আবরণ দেওয়া।

গ। প্রধান দল: 

এ দলের প্রধান কাজ হলো লক্ষ্যবস্তুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। অধিনায়ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের উপযুক্ত অস্ত্র নিধারণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার।

ঘ। সংরক্ষিত দল: 

এই দল প্রধান দলের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। অধিনায়ক হিসাবে সমগ্র অভিযানের উপর সজাগদৃষ্টি করতে হবে যাতে প্রয়োজনে অতিদ্রুত পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোন উপদলের সাহায্যে হাজির হওয়া যায়।

উপসংহারঃ

ফাঁদ ধুর্ততা এবং আকস্মিকতার সহিত সমাধা করতে হয় এবং এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। সঠিক সংবাদ,সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং দৃঢ়তার সাথে কার্য সম্পাদন ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয়। নির্বাচিত এবং ভাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিক যাদের চিন্তা শক্তি এবং দৃঢ়তা আছে কেবল তারাই এই অপারেশনে সফল হতে পারে। শত্রু ফাঁদে পড়া মাত্র কি কি ব্যবস্থা নিতে পারে সেটা শত্রুর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে ও তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট সৈনিককে কাজ বন্টন করে দিতে হবে।

About মুহম্মদ জিয়াউর রহমান

Check Also

পদোন্নতি পরীক্ষার জন্য দরকারী বহুনির্বাচনী প্রশ্নসমূহ

বিএনসিসি ক্যাডেট পদোন্নতি লিখিত পরীক্ষার জন্য দরকারী  বহুনির্বাচনী প্রশ্নসমূহঃ  সঠিক উত্তরের পার্শ্বে (√) টিক চিহ্ন …

Leave a Reply

Optimized by Optimole