ভূমিকা/লক্ষ্য :
‘জ্ঞান ও শৃঙ্খলা’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক মনোভাবাপন্ন দেশের যুবসমাজ তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ক্যাডেটদের কম্পিউটার সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা।
উদ্দেশ্য :
বিএনসিসি ক্যাডেটদের কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও ব্যবহারের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান দান করা।
কম্পিউটার পরিচিতি:
কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন করে। Computer শব্দটির সাধারণ অর্থ ‘গণকযন্ত্র’। ল্যাটিন শব্দ Compute থেকে ইংরেজি Computer শব্দের উৎপত্তি। Compute শব্দটির অর্থ গণনা বা হিসাব নিকাশ করা। কম্পিউটারের সাহায্যে মূলত যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি কার্যাবলি অতি সহজে সম্পাদন করা যায়। কিন্তু বর্তমান যুগে কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের সংজ্ঞা অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। কোন সীমিত সংজ্ঞা দিয়ে আর কম্পিউটারকে গণ্ডিবদ্ধ করা যায় না। কম্পিউটার সেকেন্ডে কোটি কোটি হিসাব-নিকাশ করতে পারে। ইলেকট্রনিক সংকেতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ বা কম্পিউটার ভাষা। কম্পিউটারের বোধগম্য এ ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারে যে নির্দেশ দেয়া হয় তারই ভিত্তিতে কম্পিউটার নির্দেশ ও তথ্য প্রদান করে থাকে। এই নির্দেশাবলিকে বলা হয় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার একটি জড় পদার্থ ভিন্ন আর কিছু নয়। উপযুক্ত প্রোগ্রামের ফলে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গাণিতিক শক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্রে পরিণত হতে পারে।
কম্পিউটারের ব্যবহার ও কাজ:
কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো বর্ণনা করা হলো:
১। সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তৈরি প্রোগ্রাম (Programs) কম্পিউটার গ্রহণ ও মেমোরিতে সংরক্ষণ করে। ব্যবহারকারীর নির্দেশে কম্পিউটার উক্ত প্রোগ্রাম নির্বাহ (Execute) করে থাকে।
২। কীবোর্ড, মাউস, জয়স্টিক, ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা (Data) গ্রহণ করে।
৩। কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াকরণ (Process) করে থাকে।
৪। মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:
বিভিন্ন যন্ত্রের মতো কম্পিউটারের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে হলো :
1. দ্রুতগতি (High speed)
২. নির্ভুলতা (Correctness)
৩. সূক্ষ্মতা (Accuracy)
৪. বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability)
৫. ক্লান্তিহীনতা (Diligence)
৬. স্মৃতিশক্তি (Memory)
৭. স্বয়ংক্রিয়তা (Automation)
৮। যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত ( Logical Decision)
৯। বহুমুখিতা (Versatility)
১০। অসীম জীবনীশক্তি (Endless Life)
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
১। দ্ৰুতগতি (High speed):
বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে কাজ করে বিধায় কম্পিউটার খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। এক সেকেন্ডে কয়েক কোটি যোগ করতে পারে। কম্পিউটারে সময়ের একক হলো ন্যানোসেকেন্ড, পিকোসেকেন্ড ইত্যাদি।
২| নির্ভুলতা (Correctness) :
কম্পিউটার মানুষের দেয়া সূত্র ও যুক্তির মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটার কখনও ভুল করে না। কম্পিউটারের নির্ভুলতা শতকরা ১০০ ভাগ। কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা ও স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি। তাই অনেক ঘর পর্যন্ত নির্ভুলভাবে গাণিতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করতে পারে।
৩। বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability):
কম্পিউটার নির্ভুল ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। কাজ করার জন্য কম্পিউটার মানুষের দেয়া নির্দেশ ব্যবহার করে থাকে। কম্পিউটার ভুল করে না কিন্তু মানুষ করে, এটা প্রমাণিত।
৪। ক্লান্তিহীনতা (Diligence):
কম্পিউটারের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা। কম্পিউটার রাত-দিন ক্লান্তিহীন, বিরক্তি বিহীন এবং বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে পারে।
৫। স্মৃতিশক্তি (Memory):
কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি (Memory) আছে। কম্পিউটারের মেমোরিতে নির্দেশ (প্রোগ্রাম), প্রয়োজনীয় ডেটা এবং প্রক্রিয়াজাত ফলাফল (ইনফরমেশন) সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
৬। স্বয়ংক্রিয়তা (Automation):
কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কল-কারখানায়, বিস্ফোরক গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৭। যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত ( Logical Decision):
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থা বিচার করে কী কাজ করতে হবে তার আগাম নির্দেশ দিয়ে রাখলে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন কাজ কম্পিউটার নিজে নিজে করতে পারে।
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার সুবিধা:
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যথা
১। কম্পিউটার খুব দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে।
২। নির্ভুল নির্দেশনা ও তথ্য পাওয়া যায়।
৩। মেমোরিতে অনেক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা যায় এবং কোনো তথ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।
৪। কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভবে কাজ করে থাকে।
৫। যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৬। ডেটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করে।
৭। একই কম্পিউটার বহু ধরনের কাজ করতে পারে ।
৮। কল্পনাহীনভাবে টানা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে থাকে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার :
১। ওয়ার্ড প্রসেসিং বা লেখালেখির কাজে টাইপরাইটারের বিকল্প হিসেবে অফিস আদালতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
২। ব্যাংকিং, শেয়ার বাজার ও ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের হিসেব তৈরি ও সংরক্ষণের কাজে গতানুগতিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে আজকাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
৩। অফিসের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কাজে আজকাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৪। শিল্প ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের কাজেও কম্পিউটরের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
৫। যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, জাহাজ, অ্যারোপ্লেন, ঘরবাড়ি, ব্রিজ ইত্যাদি ডিজাইন করার ক্ষেত্রে।
৬। বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে।
৭। একস্থান থেকে অন্যস্থানে সংবাদ প্রেরণের ক্ষেত্রে।
৮। শিক্ষাক্ষেত্রে।
৯। বিনোদনের ক্ষেত্রে যেমন- টিভি দেখা, ভিডিও দেখা ও গান বাজানো ইত্যাদি।
১০। মুদ্রণশিল্পে প্রকাশনামূলক যে কোনো কাজে।
১১। যোগাযোগ ব্যবস্থার টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সপোর্টের ডিরেকশন ও নির্ণয়ের কাজে।
১২। আধুনিক সামরিক বাহিনীতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে।
১৩। আবহাওয়া পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের কাজে।
উপসংহার:
বাস্তব এবং কর্মক্ষেত্রে নিজেদের যুগোপযোগী করে তুলতে বর্তমানে কম্পিউটার একটি অপরিহার্য বিষয়। বাস্তবতার নিরীখে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার সাথে কম্পিউটার ব্যবহারে সচেষ্ট থাকলে কর্মজীবনে সাফল্য অর্জন সহজ হবে।