ইন্টারনেট, ই-মেইল ও ওয়েব সাইটের পরিচিতি

ভূমিকা : 

‘জ্ঞান ও শৃঙ্খলা’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক মনোভাবাপন্ন দেশের যুবসমাজ তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ক্যাডেটদের কম্পিউটার সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা।

উদ্দেশ্য : 

বিএনসিসি ক্যাডেটদের কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও ব্যবহারের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান দান করা।

ইন্টারনেট কী :

ইন্টারনেটকে তথ্যের মহাসরণি বলা হয় । পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য কম্পিউটারের সমন্বয়ে গঠিত এক বিশাল নেটওয়ার্ক-এর নাম ইন্টারনেট। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে বিষয়গুলো দিয়ে সারা পৃথিবীতে বিপ্লব চলছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা মানে লক্ষ কোটি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকা।

ইন্টারনেটের আবির্ভাব:

১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের প্রথমদিকে ইন্টারনেটে মাত্র চারটি কম্পিউটার যুক্ত ছিল। ইন্টারনেটের কার্যক্রম প্রথম শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস এবং স্ট্যানফোর্ড গবেষণা ইনস্টিটিউটে। প্রাথমিক পর্যায়ে ইন্টারনেটে চারটি কম্পিউটার থাকলেও এখন রয়েছে কোটি কোটি কম্পিউটার।

ইন্টারনেট পরিচিতি :

পরস্পরের সাথে সংযোজিত অনেক সহযোগী কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর সমন্বয়ে গঠিত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ‘ই-ইন্টারনেট’ নামে পরিচিত। এক কথায় ইন্টারনেট হল অনেক নেটওয়ার্ক এর সম্মিলিত রূপ। ইন্টারনেট এর সাথে যেকোনভাবে সংযোজিত প্রতিটি মানুষই ইন্টারনেট মালিকানার অংশীদার। ইন্টারনেট কেবল নেটওয়ার্ক নয়, ইন্টারনেট বলতে শুধু কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সহজপ্রাপ্য কোন তথ্য ও বোঝায় না। অথবা ইন্টারনেট শুধুই ব্যবহারকারীর ব্যবহারকৃত কিছু প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন নয়। তাহলে ইন্টারনেট আসলে কী? এটা হল জনগণের এমন একটি সম্প্রদায় যারা এটা ব্যবহার করে এবং নেটওয়ার্কের উন্নতি সাধন করে থাকে। ইন্টারনেট এমন একটি ব্যবস্থাপনা যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষ খুব সহজে একে অপরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। যদি কোন কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত হতে চায়, তাহলে সেই কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ককে অবশ্যই কিছু আদর্শ, নিয়ম ও শর্তাবলি মেনে চলতে হবে। এই ‘আদর্শ, নিয়ম ও শর্তাবলি’ টিসিপি/আইপি প্রোটোকল নামে পরিচিত।

ই-মেইল:

ই-মেইল হলো ডিজিটাল বার্তা। যেখানে কাগজ কলম ব্যবহার করার পরিবর্তে আমরা ব্যবহার করতে পারি কি-বোর্ড এবং ফোন বা কম্পিউটার। ই-মেইল এড্রেস লেখার ক্ষেত্রে সবার প্রথমেই কাস্টম ইউজার নেইম লেখা হয় এবং @ এর পরে ডোমেইন নেইম লেখা হয়। যেমন name@gmail.com

ই-মেইল নিয়ে আরো কিছু মৌলিক তথ্য:

ই-মেইল পাঠানো :

ই-মেইল লেখার পর সঠিকভাবে তা ই-মেইল এড্রেসের মাধ্যমে প্রেরণ করলে নির্ধারিত এড্রেসে পৌঁছে যাবে।

  • ই-মেইলের মাধ্যম: প্রেরকের ই-মেইল প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে থাকে ইমেইল সার্ভার। মেসেজ পাঠানোর প্রোটকলটির নাম এসএমটিপি (SMTP), এবং ইমেইল গ্রাহকের কাছে কীভাবে ই-মেইলটি গৃহীত হবে তা বুঝতে প্রয়োজন হয় পিওপি (POP) এবং আইএমএপি (IMAP) সার্ভার।
  • ই-মেইল গ্রহণ: নতুন মেসেজ পেলে, শুধুমাত্র প্রাপ্ত মেসেজটিতে ট্যাপ করলেই মেসেজটি স্ক্রিনে ফুটে উঠবে। তখন গ্রাহক বুঝতে পারবেন তার কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়েছে।

ওয়েবসাইট (Website) :

সাধারণত ওয়েবসাইট হলো কোন নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারে রাখা বিভিন্ন ধরনের ওয়েব পৃষ্ঠা, আপলোডকৃত ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য বিষয় যেমন- Infographic, GIP, Animation ইত্যাদি ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে বোঝায়, যা আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের এর মাধ্যমে এক্সেস করে দেখতে পারি।

আর ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করাতে হলে আমাদের নিচের ৩ টি কাজের মধ্যদিয়ে এগোতে হবে। বিএনসিসির একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে www.bncc.info

  • প্রথমত, আমাদেরকে অবশ্যই একটি ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • পছন্দের প্লান ও প্যাকেজ অনুযায়ী ভালো মানের ওয়েব হোস্টিং কিনতে হবে।
  • সবশেষে ওয়েবসাইটটি ডিজাইন করতে হবে।

ওয়েব পেজ (Web Page):

একটা ওয়েবসাইটে বেশ কিছু ওয়েব পেজ বা পৃষ্ঠা থাকে। ওয়েব পেজ বা পৃষ্ঠা মূলত একটি html document যা http protocol এর মাধ্যমে ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়। আর এই সমস্ত উন্মুক্ত ওয়েবসাইটগুলিকে সমষ্টিগতভাবে ‘www’ অর্থাৎ (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা বিশ্বব্যাপী জাল) বলা হয়ে থাকে।

ওয়েবসাইটের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাসমূহ:

১। খুব কম খরচে যেকোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ওয়েবসাইট ব্যবহার করে তাদের ব্যবসার প্রসার করতে পারে।

২। যে কেউ যে কোন স্থান থেকে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য যে কোন সবসময় দেখতে পারে।

৩। নির্দিষ্ট প্রসেস এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে তাৎক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করা যায়।

৪। ওয়েবসাইটে লেখা, অডিও ভিডিও, স্থিরচিত্র, অ্যানিমেশন ইত্যাদি যুক্ত করাসহ আরও অনেক কাজ করা যায়।

৫। ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন- বিভিন্ন ডাউনলোড পিডিএফ ফাইল, ভিডিও, অডিও) করা যায়।

৬। সাধারণত প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে অনেক কম খরচে আকর্ষণীয় ও ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।

৭। বড় বড় কর্পোরেশন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের ও পরিচিতি লাভের জন্য ওয়েবসাইটকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

৮। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব দ্রুত ও সহজেই যেকোন ব্যবসা মানুষের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে ও আস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।

৯। বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট থাকার ফলে আমরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও জানতে পারি। যেমন- বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি।

১০। ওয়েবসাইটের ব্যবহার আছে বলেই Amazon, Aliexpress, এবং Ebay এর মত বড় বড় ই-কমার্স সাইট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেগুলো হতে আফিলিয়েশন এর মাধ্যমে নিজ সাইট গড়ে তুলে আজ মানুষ অনেক টাকা ইনকাম করতে পারছে।

উপসংহার:

পরস্পরের সাথে দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এর ব্যবহারে আমরা যে কোন বিষয়ে অতি অল্প সময়ে চিঠিপত্র একস্থান হতে অন্যস্থানে প্রেরণ করতে সক্ষম হই। অপরদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে অনেকেই এর অপব্যবহার করে আসছে। বাস্তবতার নিরীক্ষে ইন্টারনেট ও ওয়েব সাইট বর্তমান যুগে একটি অপরিহার্য যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।

About মুহম্মদ জিয়াউর রহমান

Leave a Reply

Optimized by Optimole